
কক্সবাজারের চকরিয়া থানা হাজত থেকে কম্পিউটার অপারেটর দুর্জয় চৌধুরীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মামলা গ্রহণ করতে কক্সবাজারের পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ (ভা.) মামুনুর রশিদ রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) এ নির্দেশ দেন। মামলায় চকরিয়া থানার ওসি, এএসআই সহ ৯ জনকে আসামী করা হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের জেলা নাজির এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি আরো জানান, চকরিয়া থানা হাজত থেকে লাশ উদ্ধার করা দুর্জয় চৌধুরীর পিতা কমল চৌধুরী তার সন্তান হত্যার ঘটনায় মামলা গ্রহণের আবেদন জানিয়ে গত ১০ সেপ্টম্বর কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মামুনুর রশিদ এর আদালতে একটি ফৌজদারী দরখাস্ত দাখিল করেন। যার ফৌজদারী দরখাস্ত নম্বর : ১০/২০২৫ ইংরেজি। দরখাস্তে তিনি উল্লেখ করেন, তার সন্তান দুর্জয় চৌধুরীকে গত ২২ আগস্ট চকরিয়া থানা হেফাজতে নির্যাতন করে হত্যার ঘটনায় চকরিয়া থানায় গত ২৬ আগস্ট তিনি একটি মামলা দায়ের করতে চাইলেও চকরিয়া থানা কর্তৃপক্ষ মামলাটি গ্রহণ করেননি। তাই কমল চৌধুরী তার সন্তান হত্যার এ মামলা নিতে আবেদন জানিয়ে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আবেদনটি দায়ের করেছেন। রোববার (১৪ আগস্ট) বিজ্ঞ বিচারক মামুনুর রশিদ আবেদনটির গ্রহনযোগ্যতা শুনানী করে ২০১৩ সালের নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারন) আইনের ৫(১) ধারা অনুযায়ী মামলটি অনতিবিলম্বে গ্রহন করতে কক্সবাজারের পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন। একইসাথে মামলাটি এন্ট্রি করার পর গৃহীত পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে আগামী ২১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আদালতকে অবহিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ফৌজদারী দরখাস্তে চকরিয়া থানার তৎকালীন ওসি সফিকুল ইসলাম, চকরিয়া থানার এএসআই মোহাম্মদ হানিফ মিয়া, কনস্টেবল মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, কনস্টেবল ইসরাক হোসেন, চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খানম, সহকারী শিক্ষক মোঃ জসীম উদ্দিন, সহকারী শিক্ষক মোস্তফা কামাল, অফিস সহকারী মোঃ পরভেজ ও নৈশ প্রহরী নুর মোহাম্মদকে আসামী করা হয়েছে। ফৌজদারী দরখাস্তে ১০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। কমল চৌধুরীর পক্ষে অ্যাডভোকেট রবিন্দ্র দাশ রবি ফৌজদারী দরখাস্তটি আদালতে দাখিল করেন। কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরসভার ভরামুহুরী হিন্দুপাড়ার কমল চৌধুরীর পুত্র দুর্জয় চৌধুরী (২৭) চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর ছিলেন।
একই ঘটনায় কক্সবাজারের চকরিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খানম, সহকারী শিক্ষক মোঃ জসীম উদ্দিন, সহকারী শিক্ষক মোস্তফা কামাল, অফিস সহকারী মোঃ পরভেজ ও নৈশ প্রহরী নুর মোহাম্মদকে আসামী করে পৃথক আরো একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। যার নম্বর : সিআর-২১০৩/২০২৫ (চকরিয়া)।
প্রসঙ্গত, চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার অপারেটর দুর্জয় চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খানম গত ২২ আগস্ট রাত্রে চকরিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এমামলায় চকরিয়া থানা পুলিশ দুর্জয় চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে থানা হাজতে রাখেন। শুক্রবার ভোরে থানা হাজতের ভেতরে তার ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান পুলিশ সদস্যরা। ঝুলন্ত মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের পর সৎকার্য সম্পাদন করা হয়।
পাঠকের মতামত